শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুসের আলোয় রঙিন হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিলো কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সকল বয়সের মানুষ। বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের উপর অপূর্ব কারুকাজে তৈরি সাতটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ, সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী সহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ উৎসব। “সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার“ এ প্রতিপাদ্যে রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছর ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজে ভাসলো সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর। এমনকি আকাশ ছাড়িয়ে পাখিও পানিতে। ২৮ বুদ্ধের আসন এবং বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। সাতটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে সাতটি কল্প জাহাজ নদীর এপার থেকে ওপারে চলে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরের দিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) বেলা ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহনে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব মুলত সার্বজনিনে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে শত বছর ধরে চলা কল্প জাহাজ ভাসা এ উৎসব।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়া জানান, প্রায় দুইশো বছর আগে মংরাজ ম্রাজংব্রান জাহাজ ভাসানো উৎসবের প্রথম আয়োজন করেন। প্রবারণা পূর্ণিমায় একসঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এ আয়োজন চলতো। বাংলাদেশের রামুতে শত বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে উৎসবে আশীর্বাদক ছিলেন শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ. ছেকাচারা মহাথের, প্রধান অতিথি থেকে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, বিশেষ অতিথি ছিলেন, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply